সময়টা তখন ১৯৭১ সাল। সেদিন ও পূর্বের আকাশে রক্তিম সূর্য উঠেছিল। পাশেই ছিল গ্রামের পুকুরটা,গিয়েছিলাম পানি আনতে হঠাৎ গোলাগোলির বিকট শব্দ। পানি না নিয়েই চলে এসেছিলাম সেদিন, ভয়ে আমি তখনও কাঁপছি।এসেই সব দরজা জানালা বন্ধ করে দেই। যদি জানোয়ার গুলো চলে আশে। রাস্তার পাশেই ছিল আমাদের বাড়িটা। কিছুহ্মন পর একটা জিপ গাড়ির শব্দ সাথে ভয়ংকর সেই পায়ের বুট জুতার শব্দ। যেন এদিকেই কেউ আসছে,আমার বুঝতে আর বাকি নেই তারাই সেই হায়েনার দল। আরতো বাঁচার কোন উপায় নেই।পরপর দরজায় দুইবার লাথি। আমি কোন উপায় না পেয়ে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে শুরু করলাম। এমন সময় কোথায় থেকে যেন মিন্টু ছুঁটে আসল।একটা বীর যোদ্ধা ছিল বটে, হাত না থাকলে কি হবে চারটা পা ছিল তার। একজন শত্রুকেও ছাড় দেয়নি সে,তারা যতই বলছিল থ্যারো থ্যারো নেহি তো মার দেয়ুংগি। তাদের বন্দুকের গুলির ভয় ছিল না তার। যার জিতার নেশা থাকে তার আবার মরার ভয় থাকেনা। সবকয়টাকে হারিয়ে সেদিন তারিয়েছিল যেন সে জানতো তারা আমাদের শত্রু। সেইদিন সবাই মিন্টুর জন্যই প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলাম…সেদিন বেঁচে গেলেও দেশ স্বাধীনের পর নিষ্ঠুর রাজাকাররা তাকে বাঁচতে দেয় নি,খাবারে বিষ মিশিয়ে তাকে মেরে ফেলেছিল। জানো দাদুভাই কে ছিল সে মিন্টু! মিন্টু ছিল আমাদের পোষা প্রিয় কুকুর। এই সমাজ মিন্টুকে জানোয়ার বলে কিন্তু আমি জানি সে কত বড় বীর। জানোয়ারতো তারা যারা সেদিন নির্মমভাবে প্রাণগুলো কেড়ে নিয়েছিল। দাদুভাই এই দেশটা যে দাম দিয়ে কিনা কারো দানে পাওয়া নয়। কতো কতো প্রাণ যে দিতে হয়েছে এই লাল সবুজ পতাকার জন্য,আরে তাদের অর্জনইতো আজ তোদের অহংকার। দেশকে সবসময় ভালবাসবি, মনে রাখবি এটা তোদের গর্ব।এ্যামি কানাডা থাকে,ছুটিতে দেশে বেড়াতে এসেছিল। আজ সে আবার কানাডা ফিরে যাবে,সাথে দাদুর দেয়া ভালবাসার স্মৃতি অার পতাকাটা সে নিয়ে যাবে। টেবিলের উপর পরে থাকা পতাকাটা সে তুলে নিল, পরম যত্নে সে আঁকড়ে ধরে আছে পতাকাটা,এটা যেন শুধুই তার।